ব্যাংকের ছুটির তালিকা ২০২৬: ২৮ দিন ছুটি অনুমোদন (সম্পূর্ণ তালিকা ও পরিকল্পনা গাইড)
ব্যাংকের ছুটির তালিকা ২০২৬: ২০২৬ সালের জন্য আপনার আর্থিক ও ব্যক্তিগত পরিকল্পনা শুরু করার সময় এসে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক (Bangladesh Bank) সম্প্রতি ২০২৬ সালের জন্য তফসিলি ব্যাংকগুলোর ছুটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকাটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, ২০২৬ সালে সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্রবার ও শনিবার) এবং অন্যান্য সরকারি ছুটি মিলিয়ে ব্যাংকগুলো মোট ২৮ দিন বন্ধ থাকবে। এটি কেবল একটি ছুটির তালিকা নয়, এটি আপনার আগামী বছরের ভ্রমণ, ব্যবসায়িক লেনদেন এবং ব্যক্তিগত ইভেন্টগুলো পরিকল্পনা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
এই আর্টিকেলে, আমরা কেবল তারিখগুলোর একটি তালিকা দেবো না, বরং এই ছুটিগুলো কীভাবে আপনার কাজে লাগাতে পারেন, কোন ছুটিগুলো দীর্ঘায়িত করার সুযোগ রয়েছে এবং “ব্যাংক হলিডে” (Bank Holiday)-এর আসল অর্থ কী—তার একটি সম্পূর্ণ গাইড প্রদান করবো।
এক নজরে ২০২৬ সালের ব্যাংকের ছুটি
যেকোনো বড় পরিকল্পনার আগে মূল বিষয়গুলো জেনে নেওয়া ভালো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী ২০২৬ সালের ছুটির চিত্রটি নিম্নরূপ:
-
মোট ছুটি: ২৮ দিন (সাপ্তাহিক ছুটি অন্তর্ভুক্ত)
-
সাপ্তাহিক ছুটিতে (শুক্রবার) পড়া ছুটি: ৬ দিন
-
ব্যাংক হলিডে (Bank Holiday): ২ দিন (১ জুলাই ও ৩১ ডিসেম্বর)
এটি লক্ষণীয় যে, মোট ২৮ দিনের ছুটির মধ্যে ৬টি ছুটিই শুক্রবারে পড়েছে। এর মানে হলো, এই উৎসবের দিনগুলো আলাদাভাবে উপভোগ করার জন্য অতিরিক্ত কোনো দিন পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ তা নিয়মিত সাপ্তাহিক ছুটির সাথে একীভূত হয়ে গেছে।
২০২৬ সালের ব্যাংকের ছুটির সম্পূর্ণ তালিকা
আপনার সুবিধার জন্য, ২০২৬ সালের সমস্ত ব্যাংক ছুটির একটি বিস্তারিত তালিকা নিচে মাসভিত্তিক টেবিল আকারে দেওয়া হলো। আপনার ব্যক্তিগত ক্যালেন্ডার বা ডায়েরিতে এই তারিখগুলো চিহ্নিত করে রাখুন।
| তারিখ | বার | ছুটির উপলক্ষ | বিশেষ দ্রষ্টব্য |
| ৪ ফেব্রুয়ারি | বুধবার | শবে বরাত | চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল |
| ২১ ফেব্রুয়ারি | শনিবার | শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস | |
| ১৭ মার্চ | মঙ্গলবার | শবে কদর | চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল |
| ১৯ মার্চ | বৃহস্পতিবার | জুমাতুল বিদা | চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল |
| ২০-২২ মার্চ | শুক্র-রবি | ঈদুল ফিতর (৩ দিন) | চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল |
| ২৬ মার্চ | বৃহস্পতিবার | স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস | |
| ১৩ এপ্রিল | সোমবার | চৈত্রসংক্রান্তি | শুধু রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার জন্য |
| ১৪ এপ্রিল | মঙ্গলবার | বাংলা নববর্ষ (পহেলা বৈশাখ) | |
| ১ মে | শুক্রবার | মহান মে দিবস ও বুদ্ধপূর্ণিমা | |
| ২৬-২৮ মে | মঙ্গল-বৃহস্পতি | ঈদুল আজহা (৩ দিন) | চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল |
| ২৬ জুন | শুক্রবার | পবিত্র আশুরা | চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল |
| ১ জুলাই | বুধবার | ব্যাংক হলিডে | লেনদেন বন্ধ থাকবে |
| ৫ আগস্ট | বুধবার | গণ–অভ্যুত্থান দিবস (২০২৪) | |
| ২৬ আগস্ট | বুধবার | ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) | চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল |
| ৪ সেপ্টেম্বর | শুক্রবার | জন্মাষ্টমী | |
| ২০ অক্টোবর | মঙ্গলবার | দুর্গাপূজা (নবমী) | |
| ২১ অক্টোবর | বুধবার | দুর্গাপূজা (বিজয়া দশমী) | |
| ১৬ ডিসেম্বর | বুধবার | বিজয় দিবস | |
| ২৫ ডিসেম্বর | শুক্রবার | যিশুখ্রীষ্টের জন্মদিন (বড়দিন) | |
| ৩১ ডিসেম্বর | বৃহস্পতিবার | ব্যাংক হলিডে | লেনদেন বন্ধ থাকবে |
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ধর্মীয় বিভিন্ন দিবস (বিশেষ করে ঈদ, শবে বরাত, শবে কদর ইত্যাদি) চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই তারিখগুলোতে পরিবর্তন আসতে পারে।
এটি শুধু ছুটির তালিকা নয়, এটি আপনার স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং টুল
অধিকাংশ মানুষ এই তালিকাকে কেবল ‘কবে ব্যাংক বন্ধ থাকবে’ তার একটি তালিকা হিসেবে দেখেন। কিন্তু একজন বুদ্ধিমান পরিকল্পনাকারী একে দেখেন সুযোগ হিসেবে। ২০২৬ সালের এই ছুটির তালিকাটি গতানুগতিক নয়।
বিরল সুযোগ: ২০২৬ সালের ‘ডাবল’ মে দিবস
একটি বিশেষ বিষয় লক্ষ্য করুন। ১ মে, ২০২৬ (শুক্রবার) তারিখে একই সাথে দুটি বড় উপলক্ষ পড়েছে: মহান মে দিবস এবং বুদ্ধপূর্ণিমা (বৈশাখী পূর্ণিমা)। এটি একটি বিরল ঘটনা। যদিও দিনটি শুক্রবার হওয়ায় এটি সাপ্তাহিক ছুটির সাথে মিশে গেছে, তবে এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিবসের একত্রীকরণ দিনটিকে একটি বিশেষ তাৎপর্য দিয়েছে।
“ব্যাংক হলিডে” মানে কি সত্যিই ছুটি?
ইনসাইডার টিপ: সাধারণ মানুষ প্রায়ই ‘ব্যাংক হলিডে’ (১ জুলাই এবং ৩১ ডিসেম্বর) এবং ‘সাধারণ ছুটি’ (যেমন ঈদ বা ২১ ফেব্রুয়ারি)-কে গুলিয়ে ফেলেন।
সাধারণ ছুটি: ব্যাংক সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। কর্মকর্তারাও ছুটিতে থাকেন।
ব্যাংক হলিডে: এই দুই দিন গ্রাহকদের জন্য ব্যাংকিং লেনদেন (টাকা জমা বা তোলা) সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। কিন্তু এটি ব্যাংক কর্মকর্তাদের জন্য ছুটি নয়। এই দিনগুলোতে ব্যাংক কর্মকর্তারা ব্যাংকে উপস্থিত থেকে অর্থবছরের প্রথমার্ধ (১ জুলাই) এবং বছর শেষের (৩১ ডিসেম্বর) হিসাব মেলানোর (Year-end closing) গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করেন।
সুতরাং, এই দুই দিন ব্যাংকের দরজা বন্ধ থাকলেও ভেতরে পুরোদমে কাজ চলে।
কীভাবে ২০২৬ সালের ছুটিগুলো কাজে লাগাবেন? (চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের জন্য গাইড)
শুধু তারিখ জানাটাই যথেষ্ট নয়। এই ছুটিগুলো থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা কীভাবে আদায় করবেন, তার একটি কৌশলগত পরিকল্পনা নিচে দেওয়া হলো।
১. দীর্ঘ ছুটি কাটানোর “গোল্ডেন” সুযোগগুলো
২০২৬ সাল দীর্ঘ ছুটি কাটানোর জন্য বেশ কয়েকটি দারুণ সুযোগ নিয়ে এসেছে। দেখুন কীভাবে:
-
মার্চ (ঈদ-১ ও স্বাধীনতা দিবস):
-
১৯ মার্চ (বৃহস্পতিবার): জুমাতুল বিদা
-
২০-২২ মার্চ (শুক্র-রবি): ঈদুল ফিতর
-
পরিকল্পনা: আপনি যদি শুধু ২৩ ও ২৪ মার্চ (সোম ও মঙ্গল) ছুটি নিতে পারেন, তবে ২৫ মার্চ (বুধবার) অফিস করে ২৬ মার্চ (বৃহস্পতিবার) স্বাধীনতা দিবসের ছুটিটি এর সাথে যুক্ত করতে পারবেন। অথবা, ঈদুল ফিতরের ছুটির (২০-২২ মার্চ) আগে ১৭ মার্চ (শবে কদর, মঙ্গলবার) এবং ১৮ মার্চ (বুধবার) ছুটি নিলে আপনি ১৪ মার্চ (শনিবার) থেকে ২২ মার্চ (রবিবার) পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি উপভোগ করতে পারবেন।
-
-
মে (ঈদ-২):
-
২৬-২৮ মে (মঙ্গল-বৃহস্পতি): ঈদুল আজহা
-
পরিকল্পনা: এর আগে ২৪ ও ২৫ মে (রবি ও সোম) ছুটি নিন। তাহলে আপনার ছুটি শুরু হবে ২৩ মে (শনিবার) থেকে এবং চলবে ২৮ মে (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত। এর সাথে পরের শুক্র-শনি (২৯-৩০ মে) যোগ করলে আপনি মোট ৮ দিনের একটি বিশাল ছুটি পাবেন।
-
-
অক্টোবর (দুর্গাপূজা):
-
২০ অক্টোবর (মঙ্গলবার): নবমী
-
২১ অক্টোবর (বুধবার): বিজয়া দশমী
-
পরিকল্পনা: শুধু ১৯ অক্টোবর (সোমবার) একদিন ছুটি নিলেই আপনি ১৭ অক্টোবর (শনিবার) থেকে ২১ অক্টোবর (বুধবার) পর্যন্ত টানা ৫ দিনের ছুটি কাটাতে পারবেন।
-
২. ব্যবসায়িক ও আর্থিক পরিকল্পনা (যখন ব্যাংক বন্ধ)
ব্যাংক বন্ধ থাকার অর্থ এই নয় যে আপনার আর্থিক কার্যক্রম থেমে থাকবে। তবে পূর্বপ্রস্তুতি অপরিহার্য।
-
নগদ টাকার ব্যবস্থাপনা: দীর্ঘ ছুটির (বিশেষ করে ঈদের) আগে অবশ্যই প্রয়োজনীয় নগদ টাকা ATM থেকে তুলে রাখুন। প্রায়ই দেখা যায়, ছুটির মধ্যে ATM বুথগুলোতে টাকার সংকট দেখা দেয়।
-
ডিজিটাল লেনদেন: ছুটির দিনগুলোতে আপনার লেনদেন সচল রাখতে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) যেমন বিকাশ, নগদ, রকেট এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং অ্যাপ ব্যবহার করুন।
-
চেক ক্লিয়ারিং: ব্যবসায়ীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ—ঈদের ছুটির মতো দীর্ঘ বন্ধের অন্তত ৩-৪ কার্যদিবস আগে চেক ক্লিয়ারিং বা RTGS/BEFTN সম্পন্ন করুন। ছুটির ঠিক আগে জমা দেওয়া চেকের টাকা পেতে বিলম্ব হতে পারে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন: ২০২৬ সালে ব্যাংক মোট কত দিন বন্ধ থাকবে? উত্তর: বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকা অনুযায়ী, ২০২৬ সালে সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্র ও শনি) এবং সরকারি ছুটি মিলিয়ে ব্যাংক মোট ২৮ দিন বন্ধ থাকবে।
প্রশ্ন: ব্যাংক হলিডে (Bank Holiday) মানে কি? উত্তর: ব্যাংক হলিডে হলো সেই নির্দিষ্ট দিন (১ জুলাই এবং ৩১ ডিসেম্বর) যখন ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের সাথে কোনো প্রকার লেনদেন করে না, তবে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ হিসাব-নিকাশ (বিশেষত অর্ধ-বার্ষিক এবং বার্ষিক হিসাব) সম্পন্ন করার জন্য কর্মকর্তারা অফিসে উপস্থিত থাকেন।
প্রশ্ন: ২০২৬ সালে ঈদের ছুটি কবে? উত্তর: প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী, ঈদুল ফিতরের ছুটি ২০-২২ মার্চ (শুক্র-রবি) এবং ঈদুল আজহার ছুটি ২৬-২৮ মে (মঙ্গল-বৃহস্পতি) নির্ধারিত হয়েছে। তবে উভয় ছুটিই চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন: এই ছুটির তালিকা কি পরিবর্তন হতে পারে? উত্তর: হ্যাঁ, দুটি কারণে এটি পরিবর্তিত হতে পারে। প্রথমত, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল ধর্মীয় ছুটিগুলোর তারিখ পরিবর্তন হতে পারে। দ্বিতীয়ত, সরকার কোনো বিশেষ প্রয়োজনে নির্বাহী আদেশে যেকোনো ছুটির তারিখ পরিবর্তন বা নতুন ছুটি ঘোষণা করতে পারে।
২০২৬ সালের এই ব্যাংকের ছুটির তালিকা কেবল একটি রুটিন বিজ্ঞপ্তি নয়, এটি আপনার সময় এবং অর্থের সঠিক ব্যবস্থাপনার একটি চাবিকাঠি। আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা করা, ব্যবসায়িক দেনা-পাওনা মেটানো, অথবা পরিবারের সাথে দীর্ঘ সময় কাটানোর জন্য এই তালিকাটি আপনাকে আগে থেকেই প্রস্তুত হতে সাহায্য করবে।
আমাদের পরামর্শ হলো, শুধু তালিকায় চোখ না বুলিয়ে, আপনার স্মার্টফোন ক্যালেন্ডারে এখনি এই তারিখগুলো সেভ করে ফেলুন এবং সম্ভাব্য দীর্ঘ ছুটির পরিকল্পনাগুলো আপনার সহকর্মী বা পরিবারের সাথে আলোচনা শুরু করে দিন।
আরও পড়ুন: এইচএসসি ফল পুনর্নিরীক্ষণ ২০২৫: ঢাকা বোর্ডে ২০১ জনের নতুন জিপিএ-৫, ফেল থেকে পাস ৩০৮